রাজ্যের গর্ব সিপাহীজলা চিড়িয়াখানায় একের পর এক পশু মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া গোটা চিড়িয়াখানা জুড়ে।হতাশ রাজ্যের পশুপ্রেমীরা।আশ্চর্যের বিষয় হল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ একের পর এক পশু মৃত্যুর মূল রহস্যে উদঘাটনের পরিবর্তে ড্যামেজ কন্ট্রোলে ব্যস্ত।নানান যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমের সামনে।গত একপক্ষ কালের মধ্যে চার বছর বয়সের দুটি পুরুষ সিংহ ও একটি প্রাপ্তবয়স্ক স্পটেড হরিণের মৃত্যু হয়েছে।গোপন সূত্রের খবর অনুযায়ী চিড়িয়াখানায় খাদ্যে সরবরাহকারি বরাত প্রাপ্ত ঠিকেদার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় নেতৃত্বদের ম্যানেজ করে বছরের পর বছর অতি নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে চলেছে।যার খেসারত দিচ্ছে অবুঝ প্রাণীরা।বাঘ,সিংহ কে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ কেজি তাঁজা মাংস দেওয়ার পরিবর্তে রুগ্ন,অসুস্থ ও মৃত্যুর পথযাত্রী অসুস্থ প্রাণীদের কম দামে সংগ্রহ করে মাংস সরবরাহ করা হচ্ছে।এতে প্রাণীদের সুস্থ
থাকার পরিবর্তে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে বলে অভিযোগ।অন্যদিকে একের পর এক সিংহ ও হরিণের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিপাহীজলা চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃকেশব দেবনাথ জানান সিংহের মৃত্যুগুলি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রত্যাশিত ছিল।চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো পশুর পিতা মাতা যদি সম্পর্কে আপন ভাই বোন হয়ে থাকে তাহলে তাদের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া যে কোনো পশুর মধ্যে জেনেটিক্যাল ডিসঅর্ডারের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।গত ১৫ মে ও ২৫ মে চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া চার বছর বয়সি মিরো ও চিরোর পিতা মাতা ছিল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের অন্তর্গত গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গের নর্থ বেঙ্গল সাফারিতে পাঠানো রাম সীতা।তারা দুজনেই ছিল সম্পর্কে ভাই বোন।চার বছর পূর্বে রাম সীতা মিরো ও চিরুর সাথে আরও দুটি সিংহ শাবকের জন্ম দিয়েছিল কিন্তু ওই দুটি শিশু শাবক জন্মের পরেই
মৃত্যুবরণ করে।ফলে মিরো ও চিরো দুই ভাই গত চার বছর ধরে সিপাহীজলা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বড় হতে থাকে শরীরে নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও।মৃত্যুর আগে তাদের ওজন হয়েছিল প্রায় একশ কুড়ি কেজি এবং তাদের ঠিকানা ছিল ১৯ নম্বর এনক্লোজার।গত ৬ মে থেকে দুটি সিংহ শাবকেরই লো-ইমিউনিটির সমস্যা দেখা দেয়।সিভিয়ার গ্যাস্টাইটিসের কারণে দুটি সিংহ শাবকই কিছুদিন কিছু খেতে পারছিল না।ফলে চিড়িয়াখানার হাসপাতালে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে স্যালাইন সহ আনুষাঙ্গিক ঔষধপত্র দেওয়া সত্ত্বেও সিডিউল ওয়ান ক্যাটাগোরির দুটি সিংহ শাবকের শেষ রক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।ফলে আর.কে.নগরস্থিত ত্রিপুরা ভেটেনারি মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসকদের একটি দল সিপাহীজলা চিড়িয়াখানায় পৌঁছে মৃত সিংহের ময়নাতদন্ত শেষে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে হায়দ্রাবাদের
একটি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আরও বিশদ জানতে।অন্যদিকে ভারতীয় জু-অথরিটির নিয়ম অনুযায়ী রবিবার ই চিড়িয়াখানার ভেতরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মৃত সিংহটির দেহটি আগুনে পোড়ানো হয়েছে।তবে চিকিৎসকরা মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানা দিক তুলে ধরলেও চিড়িয়াখানায় বছরের পর বছর অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করার ফলেই চিড়িয়াখানার পশুরা দিনের পর দিন দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ।